(আমাদের নতুন সিরিজ "ছোটদের নবী কাহিনী" । এই সিরিজে আমরা নির্ভরযোগ্য সুত্রে বর্নিত বিভিন্ন নবীদের কাহিনী জানব। ছোটদের উপযোগী করে লেখা হলেও, বড়দেরও অনেক কিছু জানার আছে)
---------------

আচ্ছা বলো দেখি, মানুষ তো কথা বলে। কিন্ত অন্য প্রানীরা কি কথা বলে?

ক্বুরবানীর হাট থেকে একটা ছাগল আর গরু কিনেছিলাম। দুটোকেই বাড়ির নিচে বেঁধে রাখলাম। ছাগলটা সারা দিন খালি “ব্যা ব্যা” করত। গরুটা অবশ্য চুপচাপ শুয়ে থাকত। হঠাৎ হঠাৎ ডেকে উঠত “হাম্বা! হাম্বা!”

কখনও কখনও রাস্তায় বের হলেই শুনি কুকুর ডাকছে “ঘেউ...ঘেউ...”। মাঝে মাঝে বিড়ালও দেখি। গাড়ি দেখলে দৌড় দেয় আর চিৎকার করে “মিয়াও...মিয়াও...”

এই যে গরু ছাগল কুকুর কিংবা বিড়াল...এদের ডাকের কি কোন অর্থ আছে? নাকি এমনি এমনি ওরা ডাকে? তোমাদের কি মনে হয়?

সত্যি কথা বলতে সব প্রানীই কথা বলে। ঘরের দেয়ালে থাকা টিকটিকি যেমন কথা বলে, ঠিক তেমনি কথা বলে ছোট্ট পিঁপড়ে। ছাগলের ডাক যতই আমাদের কাছে ‘ব্যা ব্যা’ মনে হোক না কেন, আসলে এর আলাদা একটা অর্থ আছে। তেমনি ভাবে কুকুর বিড়াল গরু সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলে, ভাব প্রকাশ করে।

কিন্ত আমরা ওদের কথা বুঝিনা। ওদের কথা বোঝার মত ক্ষমতা আল্লাহ আমাদের দেন নি।

কিন্ত, একজন মানুষ ছিলেন, যিনি প্রানীদের কথা বুঝতে পারতেন। বুঝতে পারতেন পশু, পাখি এমনকি পিঁপড়েদের কথাও তোমরা কি জান তার নাম কি?

আজ তোমাদেরকে সে মানুষের গল্পই শোনাব। তার নাম সোলায়মান আলাইহিস সালাম। তিনি ছিলেন আল্লাহ্‌র নবী।

সোলায়মান আলাইহিস সালামের বাবা ছিলেন দাউদ আলাইহিস সালাম। দাউদ আলাইহিস সালামও ছিলেন আল্লাহ্‌র নবী। পাশাপাশি তিনি ছিলেন সে দেশের রাজা। সে হিসেবে সোলায়মান আলাইহিস সালামকে তোমরা ‘রাজকুমার’ বলতে পার।

ছোটবেলা থেকেই সোলায়মান আলাইহিস সালাম ছিলেন অনেক বুদ্ধিমান। সবাই তার বুদ্ধির অনেক প্রশংসা করতেন। কেন তার প্রশংসা করতেন, তোমাদেরকে তার দুটো গল্প বলি।

.

বাচ্চা কার?
দাউদ আলাইহিস সালাম ছিলেন দেশের রাজা। তাই অনেক মানুষ তার কাছে বিচার নিয়ে আসতেন। তিনি সবার মাঝে সুন্দর মিমাংসা করে দিতেন। দেশের মানুষ এজন্য দাউদ আলাইহিসকে অনেক পছন্দ করতেন।

এক গ্রামে দুজন মহিলা ছিল। দুজনেরই ছিল দুটো ছোট বাচ্চা। প্রায় একই রকম বয়স।

সে সময় গ্রামে বাঘের খুব উৎপাত ছিল। বাঘ এসে যখন তখন মানুষকে আক্রমন করত। ছোট ছোট বাচ্চাদের খেয়ে ফেলত।
একদিন বাঘ এসে দুই শিশুর একটাকে খেয়ে ফেলল। অন্য শিশুটাকে নিয়ে দু মহিলার মধ্যে লাগল ঝগড়া।

একজন বলে “এই বাচ্চা আমার। তোমার বাচ্চাকে বাঘে খেয়েছে।“
অন্যজন বলে “না,এই বাচ্চা আমার। বরং তোমার বাচ্চাকে বাঘে খেয়েছে।“

কী মুশকিল! গ্রামের লোকজন দুজনকেই নিয়ে গেল দাউদ আলাইহিস সালামের দরবারে।

দুজন মহিলার মধ্যে একজন বয়সে বড়, অন্যজন ছোট। দাউদ আলাইহিস সালাম দুজনের কথাই শুনলেন। অনেক ভেবে চিন্তে তিনি বড়জনের পক্ষে রায় দিলেন। বললেন, “এই বাচ্চা তোমার”

বড়জন রায় শুনে খুব খুশি হল । আর ছোটজন তো কাঁদতে কাঁদতে শেষ। দরবার থেকে বেরিয়ে যাবার সময় তাদের সাথে সোলায়মান আলাইহসিস সালামের দেখা হল।

তিনি ছোটজনকে জিজ্ঞাসা করলেন “আপনি কাঁদছেন কেন?”

ছোটজন সব কথা খুলে বলল। সোলায়মান আলাইহিস সালাম তাদেরকে নিয়ে আবার এলেন রাজদরবারে। দাউদ আলাহিস সালামকে বললেন “আব্বা! আপনি এদের মাঝে বিচার করেছেন। তবে আপনি যদি অনুমতি দেন, আমি তাহলে ভিন্নভাবে এর বিচার করতে পারি”

দাউদ আলাইহিস সালাম জানতেন সোলায়মান অত্যন্ত বুদ্ধিমান। তাই তিনি অনুমতি দিলেন।

সোলায়মান আলাইহিস সালাম একটা ছুরি নিয়ে এলেন। বললেন “এক কাজ করি। ছুরি দিয়ে বাচ্চাটাকে দু টুকরো করে দুজনের মধ্যে ভাগ করে দেই। দুজনেই অর্ধেক অর্ধেক করে বাচ্চা পাবে। তাহলে আর কোন ঝামেলা থাকবে না।“

সোলায়মান আলাইহিস সালাম তাই করতে গেলেন। অমনি ছোটজন চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠল “দোহাই আল্লাহ্‌র! এই কাজ করবেন না। আমার বাচ্চার দরকার নেই। আপনি বড়জনকেই বাচ্চাটা দিয়ে দিন। তবু ওকে প্রানে মারবেন না”

সোলায়মান আলাইহিস সালাম তখন বললেন “কোন মা সন্তানের ক্ষতি হোক তা চায় না। নিজের জীবন দিয়ে হলেও সন্তানকে বাঁচাতে চায়। বাচ্চাটাকে কাটা হবে শুনে এই মহিলা চিৎকার দিয়ে কেঁদেছে। বাচ্চাটা তাতে বুঝা যাচ্ছে, এই মহিলাই বাচ্চার আসল মা”

সোলায়মানের কথা শুনে দাউদ আলাইহিস সালাম খুব খুশি হলেন। সবাই বুঝল, সোলায়মানের বিচারই ঠিক। উপায় না দেখে বড়জন স্বীকার করল, সে মিথ্যে বলেছে।

সবাই সোলায়মানের খুব প্রশংসা করলেন। দাউদ আলাইহিস সালাম সোলায়মানের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দুআ করলেন।

বাচ্চাটিকে ছোটজনের কাছে, তার আসল মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হল।

(চলবে...)