(আমাদের নতুন সিরিজ "ছোটদের নবী কাহিনী" । এই সিরিজে আমরা নির্ভরযোগ্য সুত্রে বর্নিত বিভিন্ন নবীদের কাহিনী জানব। ছোটদের উপযোগী করে লেখা হলেও, বড়দেরও অনেক কিছু জানার আছে)
---------------
(পুর্বে প্রকাশের পর)

হারুত-মারুত ফেরেশতা
সোলায়মান আলাইহিস আলামের দেশে তখন যাদু বিদ্যার অনেক প্রচলন ছিল। দুষ্ট জ্বীন ও শয়তান জাদুবিদ্যার চর্চা করত। জাদু বিদ্যার মাধ্যমে তারা মানুষের ক্ষতি করত। স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া লাগাত। মানুষে মানুষে ভেজাল লাগাত। আরো অনেক খারাপ কাজ করত।

কিছু দুষ্ট লোক সোলায়মান আলাইহিস সালামকে নবী বলে মানতে চাইত না। তারা বলতো সোলায়মান অনেক বড় জাদুকর। সোলায়মান যা করেন, সব জাদুর সাহায্যে করেন।

জাদুবিদ্যা খুব খারাপ জিনিস। জাদুবিদ্যার মাধ্যমে মানুষের কোন উপকার হয় না। জাদুকরেরা শয়তানের সাহায্যে মানুষের শুধু ক্ষতি করে। তাই আল্লাহ জাদুবিদ্যাকে অত্যন্ত অপছন্দ করেন। জাদুবিদ্যা করা, জাদুবিদ্যার চর্চা করা কুফুরি কাজ। যারা জাদুবিদ্যা করে, জাদুবিদ্যার চর্চা করে মানুষের ক্ষতি করে, ক্বিয়ামাতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি হবে।

নবীরা এমন কাজ করতেই পারেন না। আল্লাহ নবীদেরকে মুজেযা দিয়ে সাহায্য করেন। বাতাসের মাধ্যমে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়া, পশু পাখির কথা বুঝতে পারা, এসবই ছিল সোলায়মান আলাইহিস সালামের মুজেযা। জাদু নয়।

সোলায়মান আলাহিস সালামের দেশে একটা শহর ছিল। তার নাম বাবেল। আল্লাহ সে শহরে হারুত মারুত নামে দুজন ফেরেশতা পাঠালেন। ফেরেশতাদেরকে পাঠানো হয়েছিল, মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। জাদু ও মুজেযার পার্থক্য বোঝানোর জন্য।

ফেরেশতারা মানুষদেরকে জাদু বিদ্যা শেখাতেন। বলতেন “মনে রেখ, আমরা এসেছি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে। যদি তোমরা জাদু শিখ, জাদুর চর্চা কর, তোমরা কাফের হয়ে যাবে। পরকালে কঠিন শাস্তি পাবে।“

কিছু মানুষ ফেরেশতাদের কথা মেনে নিল। জাদুবিদ্যা থেকে দূরে থাকল। তারা সব সময় আল্লাহ্‌র উপর বিশ্বাস রাখত। ধৈর্য ধরত।
আর কিছু মানুষ সব জেনেও জাদু বিদ্যা শিখল। ফেরেশতাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখল যাতে মানুষের ক্ষতি করা যায়। যাতে স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া লাগানো যায়।

তোমরা দেখবে, কিছু মানুষ আছে, যারা মানুষের ক্ষতি করেই আনন্দ পায়। সব সময় তাদের চিন্তা থাকে কি করে অন্যের ক্ষতি করা যায়। যারা অন্যের ক্ষতি করে, তারা দুনিয়াতে শান্তি পায় না। আখিরাতেও তাদের জন্য থাকবে শুধু কষ্ট আর কষ্ট।

তাই আমরা এই সব জাদুবিদ্যা থেকে দূরে থাকব। কালো জাদুর (ব্ল্যাক ম্যাজিক) কেউ চর্চা করলে তাকে বাঁধা দিব। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করব। কেউ যদি কোন জাদুকরের কাছে যেতে চায় তাকেও সচেতন করব, বাঁধা দিব। বলব, আল্লাহ আমাদের জন্য এগুলো হারাম করেছেন।

আর আল্লাহ্‌র বিধান মানলেই কেবল দুনিয়াতে শান্তি আসবে। সবাই ভাল থাকবে।
.

সোলায়মানের মৃত্যু
তোমরা কি বায়তুল মুকাদ্দাসের নাম শুনেছ?

বায়তুল মুকাদ্দাস ফিলিস্তিনে অবস্থিত। কাবা শরিফের পরে এই মাসজিদ নির্মান করা হয়। সে দিক থেকে এই মাসজিদ পৃথিবীর ২য় মাসজিদ। মুসলিম, ইহুদী, খৃষ্টান...সবাই এই মাসজিদকে অত্যন্ত সম্মান করে।

বায়তুল মুকাদ্দাস ছিল মুসলমানদের প্রথম ক্বিবলা। তোমরা কি জান, ক্বিবলা কি? ক্বিবলা হল যার দিকে ফিরে মানুষ নামাজ আদায় করে। কাবা শরীফের আগে মুসলমানরা এই মাসজিদের দিকে ফিরে নামাজ পড়তেন। পরে আল্লাহ মুসলমানদেরকে কাবা শরীফের দিকে ফিরে নামাজ পড়ার আদেশ দেন।

বায়তুল মুকাদ্দাসের মর্যাদা অনেক। তিনটি মাসজিদে নামাজ পড়লে অন্য সব মাসজিদের চেয়ে অনেক বেশি সাওয়াব পাওয়া যায়।

সে মাসজিদগুলো হল ১. মাসজিদে হারাম অর্থাৎ কাবা শরীফ, ২. মদীনার মসজিদে নববী অর্থাৎ যে মাসজিদে আমাদের নবী নামাজ পড়তেন এবং ৩. বায়তুল মুকাদ্দাস বা মাসজিদে আকসা।

সোলায়মান আলাইহিস আলামের সময়ে বায়তুল মুকাদ্দাস নতুন করে বানানো হয়। জ্বীনেরা অনেক সময় নিয়ে মাসজিদের কাজ করে।

সোলায়মান আলাইহিস সালাম একটা ঘরে আল্লাহ্‌র ইবাদাত করতেন। সে ঘর ছিল কাঁচ দিয়ে বানানো। সোলায়মান লাইহিস সালাম একটা লাঠিতে ভর দিয়ে কাঁচের ঘরে দাঁড়িয়েছিলেন। এ অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।

কিন্ত জ্বীনেরা তা বুঝতে পারে নি। তারা ভাবল, সোলায়মান আলাইহিস সালাম লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাই ভয়ে ভয়ে তারা কাজ করে গেল। লাঠিতে ভর দিয়ে সোলায়মান আলাইহিস সালাম দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেক অনেক দিন। কেউ বলে এক মাস, কেউ বলে এক বছর।

এদিকে একটা উই পোকা সোলায়মানের লাঠি খাওয়া শুরু করল। যখন লাঠির একটু অংশ খাওয়া হয়ে গেল, অমনি সোলায়মান আলাইহিস সালাম মাটিতে পড়ে গেলেন। জ্বীনেরা বুঝতে পারল সোলায়মান আলাইহিস আর বেঁচে নেই।

জ্বিনেরা যদি আগে বুঝত, সোলায়মান আলাইহিস সালাম বেঁচে নেই, তারা কাজে ফাঁকি দিত। কাজ ছেড়ে পালাত। আল্লাহ তাদের মাধ্যমে বায়তুল মুকাদ্দাসের কাজ করিয়ে নিলেন।

এখানে তোমাদের একটা কথা বলে নেই। তোমরা অনেকেই হয়তো শুনেছ, ঐ লোকের অনেক ক্ষমতা। ঐ লোকের কাছে অনেক জ্বীন থাকে। জ্বীনের কাছ থেকে সে অনেক সব খবর পায়। জ্বিনের মাধ্যমে সে অনেক কাজ করায়।

এ কথাগুলো সত্যি নয়। জ্বিনেরা মানুষের মতই আরেকটা প্রজাতি। পার্থক্য হল, তারা আগুনের তৈরি, আর আমরা মাটির তৈরি। আমরা তাদেরকে দেখতে পাইনা। এর বাইরে তাদের আর বিশেষ কোন ক্ষমতা নেই। তারা নিজেরাই সব কিছু জানে না। মানুষকে জানাবে কি?

চোখের সামনে সোলায়মান সালাম ইন্তেকাল করেছেন। তাদের যদি আসলেই কোন ক্ষমতা থাকত, তবে তারা জানল না কেন? জানা তো দুরের কথা, তারা একটু টেরও পায় নি। সোলায়মান আলাইহিস সালাম মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরই তারা বুঝতে পেরেছিল।

তাহলে বুঝা গেল, জ্বিনদের বিশেষ কোন ক্ষমতা নেই। তারা গায়েব জানে না, ভবিষ্যত জানে না।

অনেক মানুষ বিপদে পড়লে, অসুখে পড়লে জ্বীনদের কাছে যায়। আবার ভবিষৎ জানার জন্য, কোন কাজ হবে কি না তা জানার জন্য জ্বিনদের কাছে যায়। এই কাজগুলো আল্লাহ ও আমাদের নবী নিষেধ করেছেন। জ্বিন এর কাছে সাহায্যের জন্য গেলে ‘ঈমান’ নষ্ট হয়। মানুইষের ভাল মন্দ, ভবিষৎ জানেন একমাত্র আল্লাহ। এছারা অন্য কারও এমন কোন ক্ষমতা নেই।

তাই আমাদের কারো বিপদ হলে, আমরা আল্লাহ্‌র কাছে সাহায্য চাইব। নামাজ পড়ে আল্লাহ্‌র দরবারে কান্নাকাটি করব। রোগ হলে, অসুখ হলে আল্লাহ্‌র কাছে সুস্থ্যতা চাইব। ক্বুরানের সুরা পড়ে দুআ করব। প্রয়োজনে ডাক্তার দেখাব।

কিন্ত কোন জ্বিনের কাছে যাব না। যারা জ্বীন দিয়ে চিকিৎসার কথা বলে, তাদের কথা বিশ্বাস করব না।